Sumon Mussalli

HEALTH and CARE
a man kneeling on his knee and holding his hand up to a girl

গল্পঃ আর্দশ বোন!!

 – ভাইয়া তোর ফোনে একটা মেয়ে ফোন করছিলো!

– তুই আমার ফোন ধরছিলি ক্যান?

– টাকার জন্য!

– মানে?

– মানে, এখন তুই আমাকে ৫শ টাকা দিবি! নাহলে আব্বুর কাছে সব বলে দিব!

.

a man kneeling on his knee and holding his hand up to a girl

আমি রাগে বললাম, “যাহ্ যাহ্… যা বলার বলে দে..”

— আব্বুওও……!

.

– এইইই দাঁড়া বোন।

– তাহলে টাকা দাও….!

– তিন’শ দিই?

– ভাইয়া…!

– কি?

– তুমি এতো কিপটা কেন? নিজের বোনকেই তো দিচ্ছো, তাই না?

– ওরে আমার আদরিরে।

.

মানছুরাকে টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছি! এমন সময় মুনালিশা ফোন দিয়ে বলে উঠলো, – “রিফাত তোমার বোন এমন কেন?”

আমি অবাক হয়ে বললাম, – কেমন?

— “সরকার গরিবের ব্যবসাতেও ট্যাক্স বসায় আর তোমার বোন আমাদের প্রেমে!”

আমি পুনরায় অবাক হলাম!!!

মুনালিশা বললো, – “মানছুরা বলেছে, প্রেম করতে হলে প্রতিমাসে তাকে ২হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে হবে!”

আমার বোন ‘মানছুরা’ অত্যান্ত ভালো একটি মেয়ে। তাকে আমি কোনোদিন কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখেনি। তার লেখাপড়া আর টিউশ ফি সব আমরাই দেই। কিন্তু ও অতিরিক্ত এতো টাকা দিয়ে কি করে…!

প্রতিমাসে ও আমার থেকেই প্রায় ৩/৪ হাজার টাকা চেয়ে নেয়।

ভাবনার পরিশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, আগামীকাল মানছুরা কলেজের ক্লাস শেষে টাকা নিয়ে কোথায় যায় সেটা আমি লক্ষ করবো অর্থাৎ লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে ফলো করবো।

.

দুপুর ১টা ৩০মিনিট। আমি এক ফ্রেন্ডের মোটর বাইক নিয়ে মানছুরার কলেজ গেটের সামনে চলে গেলাম। দেখি আমার বোন একটা অটোতে উঠে কোথায় জানি যাচ্ছে। পিছন পিছন আমিও গেলাম।

কিছুক্ষন যাওয়ার পর দেখলাম, মানছুরা অটো থেকে নেমে একটা স্কুলগেটের ভিতরে ডুকলো। ১০মিনিট পর সেই স্কুলগেট থেকে বের হয়ে ৮বৎসর বয়সী ২টা পিচ্চি মানছুরাকে বিদায় জানাচ্ছে। তারা দুইজনেই আমার বোনটিকে জড়িয়ে ধরেছিলো।

.

মানছুরা চলে যাওয়ার পর আমি তড়িঘড়ি করে পিচ্চি দুটির সামনে গেলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, – “এইমাত্র যে মেয়েটি তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে, সে তোমাদের কি হয়?”

মেয়েটি বললো, – বোন!

আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, – “তাকে কিভাবে চিনো?”

ছেলেটি বলতে লাগলো, – “আমাদের মা মরে যাওয়ার পর আমরা কিছু খেতে পাইতাম না। দুই ভাইবোন মিলে স্টেশনে, বাজারে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে খাইতাম। একদিন মানছুরা আপুর কাছে খাবার চাওয়ার পর উনি আমাদের সম্পর্কে সব জানলেন এবং এই স্কুলে (হাতে দেখিয়ে) ভর্তি করিয়ে দিলেন! এখন আমরা এই স্কুলের হোস্টেলেই থাকি আর পড়াশোনা করি। মানছুরা আপু প্রতিমাসে এসে আমাদের আদর করে, স্কুলের বেতন আর খাওয়ার বিল দিয়ে যায়।

এই আপুই আমাদের মা বাবা। আমাদের সব।

কিন্তু আপনি কে?

.

– আমি তোমাদের এই আপুটির হতভাগা ভাই।

.

.

বাসায় এসে মানছুরাকে ডাক দিলাম।

– মানছুরা…….!

– বল ভাইয়া।

– তোর পালিত পিচ্চি দুটির মতো আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি বোন?

.

আমার চোখে জল আর আমার বোনের মুখে অশ্রুসিক্ত মৃদ্যুহাসি!

এরই নাম মায়ের জাতি

Author

Sumonmussalli

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *